বাদাম নিয়ে সকল খাঁটি তথ্য | Story Of Nuts
ভজন রসিক মানুষের রসনায় প্রাচীন কাল থেকেই বহু ধরনের মিক্স ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন সুস্বাদু রান্নায় বাদামের ব্যবহারটাও বেশ পুরাতন। খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিমান বহু গুনে বাড়িয়ে তুলতে বাদাম অনন্য ভূমিকা রাখে। কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি কত রকমের বাদামই না আছে! ভিন্ন স্বাদের এ সকল বাদাম ভিন্নরকম খাদ্য গুনাগুনে ভরপুর। যেমন: বিরিয়ানি বা সালাদে ভাজা কাজুবাদামে কামড় পড়তেই খাবারের স্বাদটা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল। বাদাম নিয়ে সকল খাঁটি তথ্য-
বাদাম আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। কিন্তু এই বাদাম শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা খুব কম মানুষেই হয়ত জানেন। বাদামে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিনের মতো আরো অনেক পুষ্টিগুণ যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। চিনাবাদাম, আখরোট, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম (আমন্ড) এবং কাজু বাদামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ খাদ্য শক্তি। সব ধরনের বাদামেই এখন পাওয়া যায় আমাদের দেশে। তাই প্রতিদিন লবণ ছাড়া বাদাম খাবার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি থাকবেন সুস্থ ও ফিট।
আর আপনার খাদ্য তালিকায় কেন বাদাম রাখবেন, জেনে নিন তার কারণ–
- বাদাম খেলে দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়।
- হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাদামে ওমেগা-৩ হার্ট ভালো রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দূর করে। বাদাম খেলে হৃদপিণ্ড সক্রিয় থাকে। নিয়মিত বাদাম খেলে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। এমনকি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বাদাম।
- শরীরের জন্য উপকারী কোলেস্টেরল পাওয়া যায় বাদাম থেকে।
- বাদামে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং আয়রন আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দৈহিক গঠন সুন্দর করে।
- বাদাম হাড় শক্ত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। নিয়মিত বাদাম খেলে হাড় শক্ত থাকে।
- বাদাম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি করে।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য বাদাম অনেক উপকারী। এটি হবু মা এবং গর্ভের সন্তান উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
- বাদামে ভিটামিন আমাদের ত্বক মসৃণ রাখে এবং বয়সের ছাপ দূর করে। চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতেও এর ভূমিকা রয়েছে। বাদামে থাকা প্রাকৃতিক তেল ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- বাদাম খেলে লিভার ও কিডনি ভালো থাকে। এটি শ্বাসকষ্ট ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
- বাদামের ফাইবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফাইবার সমৃদ্ধ বাদাম দূর করে হজমের গণ্ডগোল।
- কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে যায় বাদাম খেলে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাদামের উপকারিতা প্রচুর।
তবে যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা অবশ্যই হজম ক্ষমতা বুঝে বাদাম খাবেন। যে বাদাম খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা অ্যালার্জির সমস্যা হয় সে বাদাম এড়িয়ে চলা উচিত। বিভিন্ন ধরনের বাদাম রয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও তেলের জরুরি উৎস বাদাম। পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার হূদযন্ত্রকে রাখে সুস্থ। চিনিমুক্ত বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। এর স্বাদ মনোহরী— পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব।
সাম্প্রতিক দুটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বাদাম খান, তাদের আয়ু বেশি। এছাড়া হূদযন্ত্রজনিত বিভিন্ন সমস্যা থেকেও তারা মুক্ত থাকেন। বাদামের রয়েছে এমন সাতটি গুণ, যা জীবনকে রাখবে সদা আনন্দময়। অনেক রকমের বাদাম বিশ্বে উৎপাদিত হয়। সব বাদামই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। জানা যাক বাদামের খাদ্য উপাদান ও গুণাগুণ সম্বন্ধে।
কাজুবাদাম:
পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ, হালুয়া, লাচ্ছি, মিল্কশেক ইত্যাদি নানান মুখরোচক খাবার তৈরিতে কাজুবাদাম শুধু স্বাদই বৃদ্ধি করে না, বরং খাবারকে করে তোলে অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত। খালি খাওয়া হোক বা অন্য কোনো রেসিপি দিয়ে; কাজুবাদামে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন নানা ভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। এতো বেশি মাত্রায় ভিটামিন রয়েছে এ বাদামে যে চিকিৎসকেরা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে ভরা নোনা কাজুবাদাম পেতে ঘুরে আসতে পারেন “স্বদেশী উদ্যোক্তা” ওয়েবসাইট থেকে। ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করেও বাড়িতে বসে প্রতিদিন খেতে পারেন মজাদার এ বাদাম।
কাঠবাদাম:
বহুল পরিচিত এ বাদাম আমরা প্রায় হালকা লবন-মরিচ দিয়ে খাই। হয়ত জেনে অবাক হবেন কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এনার্জি, কার্বোহাইড্রেট, আঁশ, ফ্যাট, প্রটিন, থায়ামিন, রাইবোফ্লেভিন, নিয়াসিন- ৪ মিলিগ্রাম প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড অয়েল, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বাব্বাহ! নিজের অজান্তেই রাস্তাঘাটে বাদাম চিবুতে চিবুতে কতগুলো প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান পেয়ে গেছি জীবনে! তবে শুধু খালি খাওয়ার জন্যই নয়, রান্নায় একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে এ বাদাম বেশ জনপ্রিয়। গোস্ত রান্নায় কাঠবাদামের পেষ্ট অসাধারণ ঘ্রাণ ও সুস্বাদের জোগান দেয়।
পেস্তা বাদাম:
উৎসবের পায়েস, সেমাই , পোলাও সাজাতে গেলেই সবার আগে মনে পড়ে মজাদার পেস্তা বাদামের কথা। সুস্বাদু এ বাদামে রয়েছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর। প্রোটিন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি নানাবিধ খাদ্যগুনাগুনের দারুণ উৎস হচ্ছে পেস্তা বাদাম।
মুখরোচক স্ন্যাকস হিসেবে খ্যাত চিনা বাদাম! বাড়িতে, অফিসে সর্বত্র খাওয়ার জন্য এর জুড়ি মেলা ভার। সুস্বাদু চিনা বাদাম ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ফ্যাট, ওমেগা -৬, ভিটামিন ই, আয়রন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামের মতো খাদ্য গুনে পরিপূর্ণ। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে মজাদার এ বাদাম খেলে স্বাস্থ্যকর ওজন এবং জীবনধারা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিনা বাদাম রক্তচাপ সঠিকভাবে বজায় রাখতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে বেশ কার্যকরী।
বেশ কিছু গবেষকদের মতে, কেউ যদি প্রতিদিন পরিমিত বাদাম খাওয়া শুরু করে, তাহলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের প্রবেশ ঘটে, যা শরীরকে তো তরতাজা করেই! সেই সঙ্গে দেহ থেকে একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
Stay connected: Facebook LinkedIn